ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচী চলছে। নবঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলী ইকরাম রনি ও সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসিকের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার (৮ডিসেম্বর/২০২২) বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতি পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শহরে আনন্দ মিছিল, মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসিক জানান, আমাদের কমিটি অনুমোদন হয়েছে ৪ ডিসেম্বর। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভাইকে পুনঃবহালের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ৬ডিসেম্বর সকালে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে ডৌহাখলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ রানাকে সভাপতি ও শাহরিয়ার আলম সাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ইউনিয়ন কমিটি বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটির অনুমোদন দেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি উত্তম সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোফাজ্জল হোসেন। বুধবার রাত ১১টা ২৮মিনিটে সভাপতি উত্তম সরকারের ফেসবুকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে ডৌহাখলা ইউনিয়নের ঘোষিত ইউনিয়ন কমিটি বাতিলের দাবীতে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ডৌহাখলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ব্যানারে নেতাকর্মীরা। সভায় তারা বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের অনুমোদিত এ কমিটি অবৈধ। যাদেরকে দেয়া হয়েছে তারা বিবাহিত ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক সরকার, ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, আওয়ামীলীগের নেতা সুমন সরকার, আলম হোসেন প্রমুখ।
বিবাহিত প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দিব বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন ডৌহাখলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাকিব। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে রাজনীতি করি, অপরাজনীতি যারা করে তারা আ’লীগের শত্রæ।
এ দিকে ছাত্রলীগের এ দু’কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পাল্টা-পাল্টি পোস্ট! নতুন আর পুরাতন দু’কমিটি সমতালে কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নানা পোস্টে বিব্রত- কোনটা আসল! এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলী ইকরাম রনি ও সাব্বির আহমেদ রাসিককে সাধারণ সম্পাদক করে রোববার (৪ডিসেম্বর/২০২২) নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটির অনুমোদন দেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আল আমিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন অলি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আল আমিন তার নিজস্ব ফেসবুকে ৫ডিসেম্বর রাত ৭টা ৩১মিনিটে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কমিটির গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ডিসেম্বর পুনঃবহাল হয়েছেন হুমায়ুন কবীর। তার পুনঃবহালের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ফেসবুকে ৬ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৯মিনিটে দেয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, আমাকে পুনঃবহালের পর ব্যাকডেইটে (পূর্বের তারিখ) গৌরীপুরসহ ময়মনসিংহ জেলার যে ৯টি ইউনিটের কমিটি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে ঘোষণা করা হয়েছে তা অবৈধ ও গঠনতন্ত্র বিরোধী। নতুন কমিটি নির্বাচনের ক্ষমতা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষমতা রাখেন।
এ দিকে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার বিষয়ে দেয়া প্রেসবিজ্ঞপ্তি মঙ্গলবার (৬ডিসেম্বর/২০২২) সন্ধ্যার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। এ কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আল হোসাইনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। একই সময়ে নতুন কমিটিকে স্বাগত ছাত্রলীগের রাসিক গ্রæপের নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। দু’টি মিছিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌর শহরের ঐতিহাসিক শহীদ হারুণ পার্ক এলাকায় মুখোমুখি হয়। আল হোসাইনের নেতৃত্বে শুরুতেই রাসিক গ্রæপের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। পরে ওরা পাল্টা ধাওয়া ও হামলা করলে আল হোসাইন গ্রæপের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।
অপরদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি উত্তম সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কমিটি বহাল রাখার দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগে একাংশের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এরপরে তারা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনের কুশপুত্তলিকা বানিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি উত্তম সরকার বলেন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ৫তারিখ তাকে পূর্ণবহাল করা হয়। সেই ক্ষেত্রে ৬তারিখে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে কিভাবে কমিটি পাবলিক করা হয়? ছাত্রলীগকে কলঙ্খিত করতে দুষ্কৃতিকারীরা উদ্দেশ্য প্রণিতভাবে গঠততন্ত্র বিরোধী কাজ করছে, এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আল আমিনকে মুঠোফোনে কল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মিলেনি।